বুধবার   ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৭ ১৪৩২   ১১ রজব ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৮

আলুর বাম্পার ফলনের স্বপ্নে কৃষকের, ন্যায্য দামের শঙ্কা

ওয়াফিক শিপলু

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫  

সবুজে মোড়া আলুর ক্ষেতে দাঁড়িয়ে বগুড়ার কৃষকদের চোখে এবার স্বপ্ন বাম্পার ফলনের স্বপ্ন। ভোরের শিশির ভেজা মাঠে সার ছিটিয়ে, সেচ দিয়ে, আগাছা পরিষ্কার করে তারা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। প্রকৃতি সহায় হয়েছে, ফলনও ভালো হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও কৃষকের মনে একটাই প্রশ্ন—এই ভালো ফলনের ন্যায্য দাম কি তারা পাবেন?

বগুড়া জেলা আলু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান অঞ্চল। চলতি মৌসুমে সদর, শেরপুর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দি ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ব্যাপকহারে আলু চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার অধিকাংশ এলাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনের সম্ভাবনাও অত্যন্ত ভালো।

কৃষকদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এ বছর বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের খরচ অনেক বেড়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে গড়ে ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। 

বগুড়া সদরের গোকুল ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল করিম বলেন,

আমরা আলুর ফলন ভালো হলেই খুশি হই। কিন্তু সেই খুশি বেশিদিন থাকে না। বাজারে আলু উঠলেই দাম পড়ে যায়। এবার যদি ন্যায্য দাম না পাই, তাহলে এত কষ্ট করে চাষ করে লাভ কী?

একই কথা বললেন শাজাহানপুর উপজেলার কৃষক মোজাফফর রহমান। তিনি বলেন,

এক বিঘা জমিতে আলু তুলতে আমাদের সর্বস্ব খরচ হয়ে যায়। ফলন ভালো হলেও যদি কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচের নিচে দাম নামে, তাহলে আমাদের মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য

কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিবছর আলু বাজারে উঠতেই মধ্যস্বত্বভোগীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। মাঠ থেকেই কম দামে আলু কিনে নিয়ে পরে বেশি দামে বাজারে বিক্রি করা হয়। এতে প্রকৃত উৎপাদক কৃষক ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

কৃষকরা বলছেন, আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে অনেক কৃষক এই চাষে আগ্রহ হারাবেন। এতে দেশের সামগ্রিক আলু উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।সরকারিভাবে আলু সংগ্রহ, সংরক্ষণাগার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে মৌসুমের শুরুতেই যদি সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে আলু সংগ্রহ করে, তাহলে কৃষক অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান,

এ বছর আলুর ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারিভাবে কীভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা জোরদার করা যায়, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

আশার আলো, তবু অনিশ্চয়তা

সবুজ মাঠে দাঁড়িয়ে কৃষকের চোখে এখনো স্বপ্ন—এই ফলন যদি তাদের জীবনে একটু স্বস্তি নিয়ে আসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ন্যায্য দাম না পেলে সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।

আলুর বাম্পার ফলনের এই মৌসুমে কৃষকের ঘামে ভেজা পরিশ্রম যেন পানিতে না যায়—এটাই এখন বগুড়ার হাজারো আলু চাষির প্রাণের দাবি।

এই বিভাগের আরো খবর